শিক্ষক দিবসের বক্তৃতা :
বক্তৃতা- 1
আজ ৫ই সেপ্টেম্বর ২০২৩ শিক্ষক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত মহতী অনুষ্ঠানে উপস্থিত আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক-শিক্ষিকা মহাশয়/মহাশয়া ও মা- বাবা, সকল অথিতিবৃন্দকে শ্রদ্ধাপূর্বক প্রনাম জানাই; এছাড়া আমার স্নেহের সহপাঠী, ভাই-বোন ও দাদা-দিদি সকলকে আন্তরিকভাবে ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা জানিয়ে শিক্ষক দিবস উপলক্ষে দু-একটি কথা উপস্থাপন করছি।
আমরা আমাদের বাবা-মায়ের কাছ থেকে জীবন পাই, কিন্তু সেই জীবন কীভাবে কাটাতে হয় তা শিক্ষকের চেয়ে ভাল কেউ বলতে পারে না। পিতামাতার পরে, আমাদের সাফল্যের পুরো কৃতিত্ব আমাদের শিক্ষকদের। শিক্ষক, শিক্ষিকারা হলেন আমাদের জীবনের প্রদীপ, যারা নিজেদের পুড়িয়ে আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে থাকা অজ্ঞানতার অন্ধকার দূর করে জ্ঞানের আলোয় ভরিয়ে তোলেন।
একজন সফল মানুষের পেছনে শিক্ষকের যে কতখানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে, তা নতুন করে বলার কিছু নেই। শিক্ষক মহাশয় শুধু যে শিক্ষাদানই করেন তাই নয়। তিনি একজন শিক্ষার্থীকে জীবনে চলার পথে পরামর্শ দেন, ব্যর্থতায় পাশে দাঁড়িয়ে উৎসাহ দেন, সাফল্যের দিনে নতুন লক্ষ্য স্থির করে একজন আদৰ্শ মানুষ হওয়ার শিক্ষা দান করেন ।
তেমনি আজকের এই বিশেষ দিনটির তাৎপর্য খুঁজতে গিয়ে জানা যায় যে,একজন আদর্শ শিক্ষক ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ ৫ই সেপ্টেম্বর, ১৮৮৮ তামিলনাড়ুর তিরুট্টানিতে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন স্বাধীন ভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি এবং দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি । তিনি একাধারে রাজনীতিবিদ,দার্শনিক ও অধ্যাপক তিনি ছাত্রজীবনে অতি মেধাবী ছিলেন।
জীবনে কোনও পরীক্ষায় দ্বিতীয় হননি। বিভিন্ন বৃত্তির মাধ্যমে তাঁর ছাত্রজীবন এগিয়ে চলে। ১৯০৫ সালে তিনি মাদ্রাজ খ্রিস্টান কলেজ থেকে দর্শনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন৷ তার বিষয় ছিল ‘বেদান্ত দর্শনের বিমূর্ত পূর্বকল্পনা’। বিশ্বের দরবারে তিনি অতি জনপ্রিয় দার্শনিক অধ্যাপক হিসাবে ও পরিচিত ছিলেন।
তিনি ১৯৫৪ সালে ভারতরত্ন সম্মান পান। প্রথম জীবনে তিনি মহীশুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনা করেন। এমন কি তিনি এই বঙ্গের ক্যালকাটা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা ও করেছেন। এক সময়ে তিনি দেশ-বিদেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অধ্যাপনার আমন্ত্রণও পেয়েছেন। তিনি ভারতবর্ষের রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর তাঁর গুণমুগ্ধ ছাত্ৰ ও বন্ধুরা তাঁর জন্মদিন পালন করতে চাইলে, তিনি বলেন জন্মদিনের পরিবর্তে ৫ই সেপ্টেম্বর যদি শিক্ষক দিবস উদ্যাপিত হয় তবে আমি বিশেষরূপে অনুগ্ৰহ লাভ করবো ।
তিনি বলেন আমাদের শিক্ষকরা শুধু আযাদের শেখান না, আমাদের ভালো-মন্দের পার্থক্য বুঝতেও সাহায্য করেন।’ তাঁর এই বক্তব্য আমাদের বলে যে আমাদের জীবনে শিক্ষক থাকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এবং আমরা কত ভাগ্যবান যে আমরা আমাদের শিক্ষকদের কাছ থেকে এত কিছু শিখেছি, এখনও শিখছি এবং ভবিষ্যতেও এভাবে শিখতে থাকব। সেই থেকে এই দিনটি ভারতে শিক্ষক দিবস রূপে পালিত হয়ে আসছে।
তাই আজ একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ তথা ভারতের দেখা স্বপ্নগুলো বাস্তবায়িত করার ক্ষেত্রে শিক্ষক মহাশয় সদাসর্বদা আমাদের সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ ভাবে, পথপ্রদর্শক ও নির্দেশনা দান করার মাধ্যমে রাষ্ট্রকে সর্বাগ্রে নিয়ে যাওয়া সম্ভব করবে।
তাই এই সময় আমাদের সর্বদা করণীয় হবে শিক্ষক তথা গুরুজনদের শ্রদ্ধা জানানো, একে অন্যের সাহায্য করা অর্থাৎ সবাই মিলে চেষ্টা করে নব আঙ্গিকের পথে এগিয়ে চলা।
সবশেষে অনুষ্ঠানে উপস্থিত সভ্যগণকে আরো একবার শ্রদ্ধাপূর্বক প্রনাম জানাই এবং বন্ধু-বান্ধব সহপাঠীবৃন্দ তথা সমগ্র দেশের সাহায্যকারী সকলকে শিক্ষক দিবস উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার ক্ষুদ্র বক্তব্য এখানেই শেষ করলাম।