"কবীর (হিন্দি: कबीर, পাঞ্জাবি: ਕਬੀਰ, উর্দু: کبير) [১] - প্রাচীন ভারতের একজন কবি যিনি সেই সময়ে দাঁড়িয়ে হিন্দু - মুসলমান সম্প্রীতির কথা বলেছিলেন। তার রচনা ভক্তি আন্দোলনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করলেও তিনি আসলে প্রেমের কথা এবং জীবনের কথা বলেছিলেন যার মধ্যে প্রত্যক্ষ কোন তত্ত্ব ছিলনা। পরবর্তীকালে তার গান ও কবিতাকে সুফি ধারা এবং মরমিয়া বাদের সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হয়।[২] "কবীর" নামটি আরবি "আল-কবির" শব্দটি থেকে এসেছে। শব্দটির অর্থ "মহান"; এটি কুরআনে উল্লিখিত আল্লাহ্র ৩৭তম নাম।
কবীর
ছবিতে কবীর তাঁত বুনছেন (১৮২৫)
জন্ম
অজানা
কাশীর নিকটে লহরতালাব (বর্তমানকালে বারাণসীতে)
মৃত্যু
অজানা
পেশা
তাঁতি,কবি
পরিচিতির কারণ
ভক্তি আন্দোলনকে প্রভাবিত করেন, শিখবাদ, মরমিয়াবাদ এবং সুফিবাদ কবীর পন্থ
কবীরের জন্ম-মৃত্যু ঠিক কবে তার জানা যায় নি। লহরতালাব নামক স্থানে তার জন্ম হয় বলে অনেকে মনে করেন। মুসলমান জোলার ঘরের সন্তান ছিলেন তিনি। কবীর বড় হয়েছিলেন তাঁত শিল্পের মাঝে। বুনন শিল্পের কথা তাই বারবার উঠে আসে তার লেখার মধ্যে। এ কথা জানা যায় যে সমাজের নিম্ন বিত্ত শ্রেণীর মানুষ ছিলেন কবীর। তার লেখার মধ্যেও নিজের অর্থনৈতিক অবস্থার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। কবীর লেখক ছিলেন না কেবল, কবীর একজন সৃষ্টিকর্তা। তিনি সাধক এবং গৃহস্থ সন্ন্যাসী।
কবীরের বানী মৌখিক পরম্পরায় প্রবাহিত হত। গানের মধ্যে দিয়ে তার কথা ছড়িয়ে পড়তো যুগের ওপারে। তার গান কাশী, দিল্লী, পাঞ্জাব, রাজাস্থান, গুজরাট, বিহার, বাংলা হয়ে ওড়িশা অবধি ছড়িয়ে পড়ে। কবীরের গানে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন গুরু নানক। ১৫৭০ থেকে ১৫৭২ এ কবীরের বেশ কিছু কবিতা যুক্ত হয়ে যায় "গবিন্দাল পথি" সমূহের মধ্যে।
কবীরের লিখিত পান্ডুলিপি তিনটি পথে বিভক্ত হয়ে পড়ে। যেমন- উত্তরের শাখা– শিখদের দ্বারা পালিত হয়। এই পথ নানক, গুরু গবিন্দ সিংহের হাত ধরে ক্রমে শিখ ধারার মধ্যে ঢুকে যায়। পাশ্চাত্য শাখা– এই শাখা মূলত রাজস্থান অবধি গেছে। পরবর্তীকালে দাদূ দয়াল এবং নিরঞ্জন সম্প্রদায়ের মাধ্যমে তা বিকাশ লাভ করে। দাদূ পন্থীরা নির্গুণের উপাসক ছিলেন। পূর্বের শাখা– কবীর পন্থকে নিয়ে কাজ করে। কবীর বীজক এই শাখার একটা গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ। এখানে গানের ধারা কম, বরঞ্চ মৌখিক পরম্পরাটাকে লেখায় আটকে ফেলার চেষ্টা লক্ষ্য করা যায়। যা কেবল হাতে লেখাই নয়, ছাপাখানা অবধি পৌঁছে যায় উনিশ শতকে। এই পথে সহজ গানের পরিবর্তে তত্ত্ব কথা প্রাধান্য পায়।
কবীরের অনুবাদে বহু ভাষার সমাগম প্রত্যক্ষ করা যায়। মৌখিক ধারায় প্রচলিত ছিল কিন্তু সেগুলোকে যখন"
আকারে ধরা হয় তখন তার মধ্যে অন্য ভাষার ঝোঁক পড়ে যায়। যুক্ত হয়ে যায় প্রেক্ষাপটও।শিখ দের ক্ষেত্রে পাঞ্জাবী ভাষার অংশ জুড়ে যায়। আবার রাজস্থানে কবীরের অনুবাদ ভিন্ন স্বাদের। তার কবিতার মধ্যে বুনন শিল্পের কথা পাওয়া যায়। শাড়ি, কাপড় বোনা-এই লোকজ উপাদান গুলো কবীরের কবিতায় বার বার ফিরে আসে। আপামর জনসাধারণের কাছে পোঁছানোর জন্য কবীর খুব সরল লোকায়ত উপাদান ব্যবহার করেছিলেন তার কবিতার মধ্যে, ফলে হিন্দু, মুসলমান এই ভেদ গুলো ছাপিয়ে তিনি সকল মানুষের আপন হয়ে উঠতে পেরেছিলেন। তাই কবীরের গান এবং দোঁহা ছড়িয়ে পড়তে পেরেছে সমগ্র ভারতে। সুফিবাদের কাছাকাছি ভাবনা প্রত্যক্ষ করা যায় কবীরের লেখার মধ্যে।
কবীরের মতবাদ শিখদের ভাবনাকেও গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। কবীরের মতবাদের বর্তমান উত্তরসূরি হল কবীর পন্থ নামে পরিচিত একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়, যেটি সন্ত মৎ সম্প্রদায়গুলির অন্যতম। ১৯০১ সালের জনগণনায় "কবীরপন্থী"-দের সংখ্যা ছিল ৮৪৩,১৭১।[৩] বর্তমানে এঁদের সংখ্যা প্রায় ৯,৬০০,০০০। এঁরা ছড়িয়ে আছেন মূলত উত্তর ও মধ্যভারতে এবং বহির্ভারতে বসবাসকারী অনাবাসী ভারতীয়দের মধ্যে।
কবীরের কিছু কবিতা- [৪] ১। পানী বিচ মীন পিপাসী। [৫] ২ । কোই রহীম কোই রাম বখানৈ। [৬] ৩। বিনয় দারভেদকারের "কবীরের" কবিতার অনুবাদও উল্লেখযোগ্য।
কবীরকে নিয়ে রচিত কিছু আদি গ্রন্থ হল বীজকমূল– এটি খেমরাজ কৃষ্ণদাসের রচনা।বীজক কবীর সাহবকা– পূর্ণদাস সাহেবের রচনা।কবীর শব্দাবলী– এটি এলাহাবাদ থেকে একত্র করা হয়। কবীর সাগর– স্বামী যুগলানন্দের রচনা। সত্য কবীরকী সাথী– শিবহরের লেখা। কবীর মনশূর– প্রমাণন্দজী, মকনজী কুবেরের রচনা।পরমার্থ রাজনীতি ধর্ম– সাধু কাশীদাসের রচনা, বম্বেতে পাওয়া যায়।এছাড়াও পংচ গ্রন্থী, সংজ্ঞা পাঠ, কবীরোপাসনা পদ্ধতি, কবীর কাসৌটী, কবীর বাণী বই গুলো বিশেষ উল্লখযোগ্য।